ভারত ও বাংলাদেশ উভয়ই নদী-নির্ভর দেশ, যেখানে বহু আন্তর্জাতিক নদী উভয় দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। বিশেষ করে ভারতীয় বাঁধের কারণে বাংলাদেশে বন্যা বা পানি সংকটের মতো সমস্যার উদ্ভব হয়েছে এমন অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। এই প্রেক্ষাপটে, যদি বাংলাদেশ প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে নিজস্ব বাঁধ তৈরি করে, তার সম্ভাব্য প্রভাব ও পরিণতি কী হতে পারে?
যদি বাংলাদেশ নিজস্ব বাঁধ নির্মাণ করে, তাহলে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আন্তর্জাতিক নদী ব্যবস্থাপনার মতো সংবেদনশীল বিষয়ে একতরফা পদক্ষেপ নেওয়া দুই দেশের মধ্যে বিরোধকে আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে। এটি শুধু দ্বিপক্ষীয় আলোচনার জটিলতা বাড়াবে না, বরং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
যে ধরনের বিপর্যয়ের সম্ভাবনা
বাঁধ নির্মাণ একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল কাজ, যার ভুল ব্যবস্থাপনার ফলে অঞ্চলটির পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ পরিবর্তিত হওয়ার ফলে উজানের ও ভাটির উভয় অঞ্চলে জলচক্রের স্বাভাবিকতা ব্যাহত হতে পারে, যা কৃষি, মৎস্য, ও জীববৈচিত্র্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এটি ভূমিধস, মাটির ক্ষয় ও মিঠা পানির অভাব সৃষ্টি করতে পারে।
বাঁধের কারণে নদীর পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে আসে, যা উজানে ও ভাটিতে পানির প্রাপ্যতা নির্ধারণ করে। বাংলাদেশের বাঁধ নির্মাণ উজানের অঞ্চলে পানির প্রবাহে প্রভাব ফেলতে পারে,ফলে উজানের পানি অধিপ্রভাবিত হয়ে অন্যদিকে, ভাটিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অতিরিক্ত পানির চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে বন্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে।
সমাধানের পথে এগিয়ে যাওয়া
বাঁধ নির্মাণের মতো পদক্ষেপের আগে দুই দেশের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সমাধানের প্রস্তাব করা উচিত। পরিবেশগত প্রভাব, কৃষি, অর্থনীতি, এবং মানুষের জীবনযাত্রার মানদণ্ড বিবেচনা করে একটি যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কূটনৈতিক সমাধান এই সমস্যার টেকসই সমাধান আনতে পারে।
বাংলাদেশের প্রতিরোধমূলক বাঁধ নির্মাণ সম্ভবত একটি তাৎক্ষণিক সমাধান হতে পারে, কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব বিবেচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কূটনৈতিক আলোচনা ও পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রেখে উভয় দেশের মধ্যে একটি স্থায়ী সমঝোতা প্রতিষ্ঠা করাই উত্তম পথ হতে পারে। এর মাধ্যমে শুধুমাত্র বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষিত হবে না, বরং দক্ষিণ এশিয়ায় একটি শান্তিপূর্ণ ও সহনশীল পরিবেশ বজায় থাকবে।